বৃষ্টিতে বিপাকে ছোট ব্যবসায়ীরা

 


সারা দিনের বৃষ্টিতে গতকাল সোমবার রাজধানীর ছোট ব্যবসায়ীরা নাকাল হয়েছেন। ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসতেই পারেননি। আবার অনেকে কষ্টেসৃষ্টে বসলেও, বেচাকেনা ছিল না বললেই চলে। পাড়া-মহল্লার বাজারগুলোতেও খুব একটা ক্রেতার দেখা মেলেনি। দিন আনি দিন খাই, এসব ব্যবসায়ীর জন্য একটি খারাপ দিন ছিল গতকাল।

গতকাল রাজধানীর বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, বনানী, কচুখেত, ইব্রাহিমপুর, মহাখালী, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে এই চিত্র পাওয়া গেছে। আবার টানা বর্ষণে জাতীয় এসএমই মেলার উদ্যোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মেলার বেশ কিছু স্টলে পানি ঢুকে যায়। আবার মেলা প্রাঙ্গণেও পানি জমে যায়। ফলে বেশ কিছু উদ্যোক্তার পণ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে গতকাল তেমন কোনো ক্রেতা-দর্শনার্থীরও সমাগম ঘটেনি। মেলা প্রাঙ্গণ ও স্টলে পানি ঢুকে যাওয়ায় আয়োজকেরা দুর্ঘটনা এড়াতে বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ-সংযোগ বন্ধ রাখেন।

প্রায় ১৭ বছর ধরে কারওয়ান বাজার এলাকায় পেঁয়াজ, রসুন ও আদা বিক্রি করেন আবদুস সবুর। তিনি বলেন, সারা দিনে মাত্র দুই হাজার টাকার পেঁয়াজ ও রসুন বিক্রি করেছেন। বৃষ্টির কারণে তেমন কোনো ক্রেতা আসেননি। অন্য সময় প্রতিদিন পাঁচ-ছয় হাজার টাকার বেচাকেনা হয়।

কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা আবদুল বারিক বলেন, গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তিনি সব মিলিয়ে ২৮০ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক বেচাকেনা তিন-চার হাজার টাকা। তিনি বলেন, সকালের দিকে দুই-চারজন ক্রেতা মিললেও, দুপুরের পর কেউ আসেননি।

বিকেল পাঁচটার দিকে বৃষ্টির দাপট কমলে ফার্মগেটের তেজগাঁও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাতে কলার টুকরি নিয়ে বসেন আলিম উদ্দিন। বৃষ্টি কারণে সারা দিন তিনি পণ্য বিক্রির জন্য বসতে পারেননি। তাই বিকেল পর্যন্ত এক টাকাও বেচাকেনা নেই।

বিমানবন্দর এলাকার হজক্যাম্প বাজারে মাছ বিক্রি করেন ওয়াহাব মিয়া। তিনি বলেন, সকালে দু-একজন ক্রেতা মিললেও দুপুরের পর একদমই বেচাকেনা হয়নি। দিনে ৩০০-৪০০ টাকা আয় না হলে সংসার চালানো মুশকিল। হজক্যাম্প এলাকা থেকে শুরু করে বিমানবন্দর গোলচত্বর, রেলস্টেশন এবং আশপাশের ফুটপাতগুলোতে প্রতিদিন হকাররা সারি সারি বসে থাকেন। গতকাল বৃষ্টির কারণে সারা দিন তাঁদের দেখা যায়নি।

এদিকে গতকাল দুপুরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে এসএমই মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২৫টি স্টলে পানি ঢুকেছে। পণ্য বাঁচাতে এসব স্টলের মালিকেরা তাড়াহুড়ো করে পণ্য প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে ফেলেন। মেলা শুরুর দ্বিতীয় দিনেই গতকাল উদ্যোক্তারা বৃষ্টিবাধার মুখে পড়েন।

বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত উদ্যোক্তা দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘আগে মার্চে এসএমই মেলা আয়োজন করা হতো। তখনো ঝড়বৃষ্টি হলে মেলায় পানি ঢুকে যেত। বৃষ্টির বিষয়টি আয়োজকদের মাথায় থাকে না। তাই কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টিতে পণ্য নষ্ট হয়, তাতে ক্ষতি হয় আমাদের।’ মেলায় অংশ নেওয়া সিফাত বুটিকসের উদ্যোক্তা সুমাইয়া কাদের অভিযোগ করেন, তাঁর স্টলের ৬০ শতাংশ পোশাক বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেছে।

জানতে চাইলে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান এসএমই ফাউন্ডেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম হাসান সাত্তার গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, পানি যাতে দ্রুত শুকিয়ে যায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গত রোববার শুরু হওয়া আট দিনের মেলায় মোট ৩২৫টি স্টল রয়েছে। এর মধ্যে পোশাক ও গয়নার স্টলের সংখ্যা ১১৭।

Post a Comment

0 Comments